Thursday, 22 June 2017

শ্রাদ্ধকর্ম হল ব্রাহ্মণ্য ধান্দাবাজিঃ

                                 শ্রাদ্ধকর্ম হল ব্রাহ্মণ্য ধান্দাবাজিঃ
                                P.K.Mondal

মৃত পিতামাতার শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণ পুরোহিত আপনাকে দিয়ে যে মন্ত্রপাঠ  করায়  সে মন্ত্রের অর্থ জানেন কী ? সমস্ত শাস্ত্রগ্রন্থে এরা মানুষকে জাতের নামে হীন,নীচ প্রতিপন্ন করেছে,শ্রাদ্ধকর্মে তার ব্যাতিক্রম হয় নিশ্রাদ্ধের মন্ত্রের অর্থ না জেনে ব্রাহ্মণের কথায় বোকা যজমান কেমন নিজেকে এবং নিজের জন্মদাতা মৃত পিতা-মাতাকে গালাগালি করে দেখুন

                                        পাপহম পাপকর্মাহম পাপাত্মা পাপসম্ভবা
                                            ত্রাহিমাম কৃপাদেবা স্মরণাগতা বাৎসল্য

অর্থ হল পাপহম = আমি পাপী, পাপকর্মাহম = আমি পাপ কর্মের ফল,পাপাত্মা = আমার আত্মা পাপী,পাপসম্ভবা = আমার দ্বারা পাপই সম্ভব, ত্রাহিমাম কৃপাদেবা স্মরণাগতা বাৎসল্য” = হে দেব কৃপা করে সন্তানসম স্মরণাগতকে  আশ্রয় দিনআপনি কেন পাপী ? কোন পাপ কাজ আপনি করেছেন কী ? আপনার পিতা-মাতার পাপকর্মের ফলে আপনার জন্ম হয়েছে কী ? সত্যি তাই কী ? আপনি যদি কাল্পনিক আত্মায় বিশ্বাস করেন তাহলে সে আত্মা পাপী হল কিভাবে ? আপনার থেকে কী সব পাপই উৎপন্ন হবে ?

শাস্ত্র অনুযায়ী দেবদেবী ব্রাহ্মণের মুখ দিয়ে খায়,ব্রাহ্মণের মুখ দিয়ে কথা বলেসাধারন মানুষ ডাকলেও আসবে না, খাবেও না্,কথাও বলবে নাআবার শ্রাদ্ধ করলে মৃত পিতৃপুরুষগন ব্রাহ্মণের কথায় ওঠাবসা করেব্রাহ্মণের কথায় তারা আসবে এবং ব্রাহ্মণের কথায় তারা উত্তর পুরষদের প্রচুর দান করবেমানুষের এমন অন্ধবিশ্বাস এবং এমন নির্লজ্জ পুরোহিত তন্ত্র পৃথিবীর কোনো ধর্মে নেই
ব্রাহ্মণদের সৃষ্ট দেবদেবীরা ব্রাহ্মণের কথায় সাড়া দেয়,কেবল ব্রাহ্মণের সাথে কথা বলে,ব্রাহ্মণ খাদ্য চিবিয়ে দিলে তবে খায় এবং ব্রাহ্মণের কথায় যজমানকে সবকিছু দান করেবিনিময়ে ব্রাহ্মণ যজমানের দেত্তয়া সামান্য কিছু নিয়ে সন্তুষ্ঠ হয়এমন মহান হৃদয় ভারতীয় ব্রাহ্মন পুরোহিতদেরনিজের জন্য তবু দেবতাদের কাছে এরা কিছুই চায় নাবোকা যজমানদের এমন মিথ্যাবুলি শিখিয়েছে ব্রাহ্মন পুরোহিতবোকা যজমানরা জানে না যে,ব্রাহ্মণের তৈরী জড় পদার্থের পুতুল দেবদেবী শুধুই তাদেরকে ঠকানোর জন্যযজমানরা কি কোনো দিন ব্রাহ্মণ পুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করেছেন ? যে আপনারা শুধু আমাদের জন্য দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করেন কেন?আর আমাদের দেওয়া অল্প সম্পদে সন্তুষ্ট হন কেন ? আপনারা দেবদেবীর কাছে নিজেরা ইচ্ছামত চেয়ে নেন না কেন?দেবদেবীর কাছে চাইলে যদি সব পাওয়া যেত তাহলে তো আর আপনাদের অভাব থাকতো নাএমন সরল প্রশ্নটি যজমানরা কেন করেন না?বাবা,মায়ের মৃত্যূর পর তাঁদের আত্মা-প্রেতাত্মা ব্রাহ্মনের কথায় নাকি উঠবোস করেন,এমন দাবি ব্রাহ্মণ পুরোহিতদেরদেবদেবীরা যেমন ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট খায় আত্মা-প্রেতাত্মারা নাকি ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট খেয়ে ধন্য হয়ভূ-দেবতা সেজে এরা জীবিত মানুষকে উচ্ছিষ্ট খাইয়েছে আর মৃত্যূর পর তার প্রেতাত্মাকেও উচ্ছিষ্ট খাওয়ায় কেন খাবে না ? সমস্ত দেবদেবী যদি ব্রাহ্মণ পুরোহিতের চিবিয়ে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়ে ধন্য হয়,মানুষ খাবে না কেন ? এমন জঘণ্য বিশ্বাস হিন্দুদের

সারা জীবন বাড়ীতে এসে হাজর বাজর মন্ত্র আউড়ে যে ব্রাহ্মণ দেবদেবীর কাছ থেকে একটা পয়সা আদায় করে দিতে পারেনি,সেই বাড়ীর ছেলে আবার ব্রাহ্মন পুরোহিতের কাছে ছুটছে মৃত বাবা/মাকে স্বর্গে পাঠানোর জন্যএর থেকে হাস্যকর আর কী হতে পারে
বোকা যজমানারা আর কবে বুঝবে এসব দেবদেবী কাল্পনিক আর কর্মফল,আত্মা,প্রেতাত্মা,জন্মান্তরবাদ,স্বর্গ,নরক সব ব্রাহ্মণ পুরোহিতের ধানদাবাজিশ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের মন্ত্রবলে মৃতের পূর্বপুরষরা দলে দলে আসবে আর প্রচুর ধনসম্পদ দান করবে মৃতের সন্তানদেরএমন বিশ্বাস কী পৃথিবীর কোন সভ্য মানুষ করে?
চার্বাক পন্ডিত মাধবাচার্য বলেছেন-স্বর্গ-নরক নেই,পারলৌকিক আত্মা নেই,বর্নাশ্রমাদির ক্রিয়া নিষ্ফলঅগ্নিহোত্র তিনবেদ(ঋক,সাম যজু),ত্রিদন্ড,ছাইভস্ম লেপন,বুদ্ধিহীন পৌরুষহীন,নিষ্কর্মা মানুষের জীবিকার উপায় মাত্র
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন- “মৃত্যূর পর মানুষ স্বর্গে যায় এটা কল্পনা মাত্রসজ্জন ব্যক্তি মৃত্যূর পর স্বর্গে গিয়ে অনন্ত সুখময় জীবন যাপন করে- ধারনা স্বপ্ন মাত্রস্বর্গ নরক এসব আদিম ধারনা(বানী রচনা-দশম খন্ড-পৃষ্ঠা ১৫৯)
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন- পৌরোহিত্যই ভারতের সর্বনাশের মূলযেখানে পুরোহিত তন্ত্রের আবির্ভাব সেখানেই ধর্মের গ্লানি(জাতি,সংস্কৃতি সমাজ-স্বামী বিবেকানন্দ)
স্বামী বিবেকানন্দ বলেন- “প্রথমে দুষ্ট পুরুতগুলোকে দূর করে দাওকারণ এই মস্তিষ্কবিহীন লোকগুলো কখনও শুধরোবে নাআগে তাদের নির্মূল করোএস মানুষ হও(জাতি,সংস্কৃতি সমাজ-স্বাঃবিবেঃ-পৃষ্ঠা-২৮)
স্বামী বিবেকানন্দ- আত্মা তো নিত্য মুক্ততার আবার মুক্তির চেষ্টা কি?(স্বাঃবিবেঃ বানী ওরচনা -৯ম/২১৬পৃঃ)
শ্রীচৈতন্যদেব-পুরোহিতগনকে রাক্ষসদের সঙ্গে তুলনা করেছেন(চৈতন্য চরিতামৃতে)
ডঃআম্বেদকর -“ধূর্ত ব্রাহ্মণরা শাস্ত্র রচনা করে হিন্দুদেরকে আষ্টে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছে.”(আঃরঃবঃ- ১ম/২৫৬পৃঃ)
স্বামী বিবেকানন্দ- “যে শাস্ত্র বলছেতথাপি লোকাচারঅর্থাৎ তবুও মানুষ লোকাচারই অনুসরন করিবে্‌,সে সব শাস্ত্র-দূরে নিক্ষেপ করুন্‌,সেগুলি অর্থহীন(স্বামী বিবেকানন্দ সমগ্র-/৩০০পৃঃ)
 .আম্বেদকর -“মৃত্যূ উপলক্ষে অশৌচ পালন অপেক্ষা শোকদিবস পালন করাই যুক্তিযুক্ত শ্রাদ্ধ নয়,শ্রদ্ধা প্রদর্শনই মৃতের  প্রতি যথার্থ  সম্মান জানানো”।                  
পাগলচাঁদ -“শ্রাদ্ধ হলো ব্রাহ্মণদের শোষনের কৌশলমৃত ব্যক্তির জন্য শ্রাদ্ধের কোন প্রয়োজন নেইজীবিত অবস্হায় পিতামাতার আশীর্বাদই সন্তানের সবচেয়ে বেশী কল্যান”।    

পন্ডিত দিগিন্দ্র নারায়ন ভট্টাচার্য-তাঁর বই হিন্দুধর্মের ব্যাধি চিকিৎসাগ্রন্থের বঙ্গ বৈশ্য ক্ষত্রিয় নামক অধ্যায়ে  বলেছেন- “হৃদয়হীন ব্রাহ্মণ পন্ডিতগনের আশা ত্যাগ করোপাষানে নাস্তি কর্দমশকুনের দৃষ্টি যেমন মরা গরুর মাংসের দিকে ইহাদের দৃষ্টি লক্ষ্যও তেমনি ভারতের মুমুর্ষু হিন্দু নর-নারীর দিকে

 ব্রাহ্মণের ফাঁদে পা দিয়ে মৃত পিতা-মাতার জন্য শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করা মানে বাড়িতে ব্রাহ্মণ ডেকে মৃত পিতা-মাতাকে গালাগালি করা,অসম্মান করা।তাই ব্রাহ্মণের কথায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নয়,শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান করুনঅনাত্মীয় নাপিত,ব্রাহ্মণ নয়,নিজের আত্মীয়স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে
                                            PRASANTA KUMAR MONDAL

                                               prasanta2032.blogspot.in