প্রতিটি ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মগ্রন্থ
চরম শূদ্রবিরোধিঃ
প্রতিটি ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মগ্রন্থ
চরম শূদ্রবিরোধিঃ
শ্রীপ্রশান্ত-কুমার-মণ্ডলঃ প্রতিটি ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মগ্রন্হ চরম শূদ্র
বিদ্বেষী।অর্থাৎ প্রতিটি ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মগ্রন্থ দেশের ৮৫% মানুষের
বিরোধি।ব্রাহ্মণ্যবাদী সমস্ত
ধর্মগ্রন্থ হল“হিন্দুধর্মের ঐক্য
বিনষ্টকারী”।প্রতিটি
ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মগ্রন্থ জঘন্য জাতিভেদ তথা বর্ণপ্রথার রক্ষক ও ঘৃণ্য বর্ণপ্রথার
প্রচারক।প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ মনুসংহিতার বর্ণবিদ্বেষ ও শূদ্রবিরোধি নীতি অনুসারে
লেখা।ধর্মগ্রন্থগুলির সর্বত্র জাতপাত,বর্ণপ্রথার হাজার বিধি নিষেধ এবং ঘৃণ্য বর্ণপ্রথার
গুনকীর্তন।বর্ণপ্রথা মেনে চলাই ধর্ম,বর্ণপ্রথার সীমা বা নিয়ম না মানলে অধর্ম।ব্রাহ্মণ্যবাদীদের
এমনই হাস্যকর ধর্মের বিধান।যে কোন কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষের কাছে এ ধর্মের বিধান
হাস্যকর মনে হবে।শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যদি ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মগ্রন্থ ও
শাস্ত্রগ্রন্থ পাঠ করে তাহলে পরিস্কার বুঝতে পারবে কেন এই জঘন্য জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথাকে
ধর্ম বানাতে হল।বেদকে আদি ধর্মগ্রন্থ বলে ধরা হয়।বেদে যাদের দাস,দস্যু,তস্কর,রাক্ষস,দৈত্য,দানব,অসূর
বলে গালাগালি দেওয়া হয়েছে এবং যাদের ধ্বংস কামনা করা হয়েছে,তাদেরকেই তো দাস বানাতে
চতুর্বর্ণ প্রথার সৃষ্টি।বেদে আর্যদের তিনটি জাতি বা বর্ণ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য।পরে
যোগ হয় চতুর্থ জাতি বা বর্ণ “শূদ্র”
এদেশীয় আদি বাসিন্দাদের জন্য।।যেমন ভারতে আক্রমনকারী মুসলমানরা
এদেশীয় পরাজিত অধিবাসীদের “হিন্দু”(হীন) নামকরণ করে ঠিক সেভাবেই আর্যরা এদেশীয়
পরাজিতদের দাস বানাতে “শূদ্র”
গোষ্ঠীভূক্ত করেছিলো।তাই ভারতের সংখ্যা গরিষ্ঠ 85% মানুষ আজ শূদ্র।
ঘৃণ্য জাতপাত,বর্ণপ্রথার উপর ভিত্তি করে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ
রচিত।প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ মানবতা বিরোধি এবং চরমভাবে নারী ও শূদ্র বিদ্বেষী।ধর্মগ্রন্থের
সর্বত্র ব্রাহ্মণের মিথ্যা অলৌকিক ক্ষমতার প্রচার,ব্রাহ্মণের সুখ,দুঃখের কথা,ব্রাহ্মণের
মিথ্যা মহিমা কীর্তন ও ব্রাহ্মণের ভরন পোষনের নির্দেশ।সমস্ত ধর্মগ্রন্থে জঘণ্য বর্ণপ্রথার
জয়গান এবং জাতিভেদ তথা বর্ণপ্রথা টিকিয়ে রাখার অপকৌশল।আর সব ধর্মগ্রন্থে নারী ও
শূদ্রকে হীন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।।
আর হিন্দুধর্মের ঐক্য বিনাশ কারী জাতিভেদের দুর্গন্ধে ভরা এসব
ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্রকে হিন্দুরা না পড়ে ঠাকুর ঘরে রেখে পূজা করে।বাবা/মা মারা
গেলে ঠাকুর ঘর থেকে ধর্মগ্রন্থ(গীতা)নিয়ে মৃত বাবা/মায়ের বুকের উপর চাপিয়ে
দেয়।ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মগ্রন্থকে যতদিন হিন্দুরা এভাবে না পড়ে বুকে ধরে রাখবে,ততদিন
হিন্দুদের চোখ খুলবে না।ব্রাহ্মণের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঘৃণ্য জাতপাত তথা বর্ণের
গোলক ধাঁধায় ঘুরতে থাকবে।তাই তো অনেক শিক্ষিত হিন্দুকে দেখা যায় হিন্দু ধর্মের
স্বার্থে ঘৃণ্য জাতপাতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে নিজেকে আবার উচ্চ বর্ণের বলে
দাবী করতে।যা চরম হাস্যকর এবং নিন্দনীয়।যেমন পশ্চিমবঙ্গের ৯৪%
শূদ্রের অনেকেই আবার নিজেদেরকে বৈশ্য ও ক্ষত্রিয় বলে আন্দোলন করেন।শাস্ত্রে কিন্তু
বাংলাকে ম্লেচ্ছের দেশ বলা হয়েছে।শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক বাংলা প্রখ্যাত
ধর্মসংস্কারক,অষ্টবিংশতিতত্ত্ব প্রনেতা আচার্য রঘুনন্দনের মতে বাংলায় দুই
জাতি-ব্রাহ্মণ ও শূদ্র।এখানে কোন বৈশ্য বা ক্ষত্রিয় নেই।তাই পন্ডিতদের মতে বাংলায়
৯৪% শূদ্র এবং ৬% ব্রাহ্মণ।(সূত্র-“জলচল ও
স্পর্শদোষবিচার”ঃশ্রীদিগিন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচর্য বিদ্যাভূষণ)।এক সময় অনেক উচ্চ শিক্ষিত
বিখ্যাত মানুষ নিজেদেরকে আর্যজাতির অংশ বলে ঘোষনা করেন।এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের কটুক্তি বিখ্যাত---“কচি
কচি আর্যগুলো,ঘাসের মত গজিয়ে ওঠে,ছুঁচালো তাদের জিবের ডগা,চলতে গেলে পায়ে ফোটে”।অর্থাৎ কবগুরু শিক্ষিত হিন্দুদের
নিজেদেরকে আর্য অর্থাৎ উচ্চবর্নের বলে দাবি করাকে চরম ঘৃণা করেছেন।
ব্রাহ্মণ্যবাদীরা একটা সূত্রের সাহায্যে
সমস্ত ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্র তৈরী করেছে।সূত্রটি হল জঘণ্য জাতব্যবস্থা তথা বর্ণপ্রথা।ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকারেরা
তাদের সমস্ত অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেছে এই সূত্রের সাহায্যে।মনে রাখবেন জাতিভেদ
ও বর্ণপ্রথা সমার্থক।বুদ্ধদেবের আগমনে মানুষকে বোকা বানাতে কেবল জাতিভেদ প্রথার
জায়গায় বর্ণপ্রথা বসিয়েছে।অর্থাৎ জঘণ্য জাতিভেদ প্রথার নতূন নামকরন হল বর্ণপ্রথা।সন্ত্রাসবাদী
জঙ্গি সংগঠন যেমন মানুষকে বোকা বানাতে তাদের সংগঠনের নাম পাল্টায় ঠিক তেমন।এখন
দেখুন বেদ-উপনিষদ-গীতা-রামায়ন-মহাভারত-পুরাণ সব ধর্মগ্রন্থ গুলিতে জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথা
তথা শূদ্র বিদ্বেষ এবং ব্রাহ্মণ মহিমা প্রচারের কি সুন্দর
ধারাবাহিকতা।
@prasanta
১।ঋগ্বেবেদে জাতিভেদঃ-
ঋগ্বেদের ১০ম মন্ডলে পুরুষ সূক্তে বলা
হয়েছে-ব্রহ্মা বা যজ্ঞের মহান পুরুষের মুখ থেকে ব্রাহ্মন,বাহু থেকে ক্ষত্রিয়,উরু
থেকে বৈশ্য এবং পা বা চরণ থেকে শূদ্র জাতির উৎপত্তি।শুধুই শূদ্র জাতিকে নীচ
প্রতিপন্ন করার জন্য এমন গাঁজাখুরি সৃষ্টিতত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে।ঋগ্বেদ জুড়ে
যাদেরকে দাস,দস্যু্,রাক্ষস,অসূ্র,দৈত্য,দানব বলে গালাগালি করা হয়েছে এবং যাদের
ধ্বংস কামনা করা হয়েছে তাদেরকে চিরজীবন দাসত্বে আবদ্ধ করতে শূদ্র বর্ণের
আমদানী।বেদে শূদ্র বিদ্বেষী শ্লোক নেই বললেই চলে।তাই অনেকে বলেন বেদে পুরুষ সূক্ত
ঢোকানো হয়েছে।যদি তাই হয় তবে মূল ষড়যন্ত্রী অবশ্যই ব্রাহ্মণ।কারণ এই ষড়যন্ত্রে লাভবান
কেবল ব্রাহ্মণ।মানুষের ঐক্য বিনাশের এ এক জঘণ্য পরিকল্পনা।
২।উপনিষদে জাতিভেদঃ-
উপনিষদও জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথার বিষে বিষাক্ত।উপনিষদও
ব্রাহ্মণকে শ্রেষ্ঠ বলে চিৎকার করেছে।উপনিষদ একেশ্বরবাদের কথা বললেও সব মানুষ সমান
বলতে পারে নি।কারণ শাস্ত্রকারের উদ্দেশ্য তো হিন্দুত্ব নয়,মনুষত্বও নয়,ব্রাহ্মণত্বের প্রচার।তাই উপনিষদ ও ব্রাহ্মণের
গুন কীর্তনে মরিয়া।
বৃহদারণ্যক উপনিষদ(১/৪/৪৮-১/৪/৫২)ঃ-ব্রহ্মা
উন্নতর মানুষ হিসাবে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় সৃষ্টি করেছে।
ছান্দগ্য উপণিষদ(৫/৪০৭)ঃ-পৃথিবীতে কুৎসিত কাজ করেছিলো তারা
কুকুরযোনী,শুকরযোনী ও চন্ডালযোনীতে জন্মেছে।
অনেকে উপনিষদ নিয়ে বড়বড় কথা বলেন দেখুন উপনিষদ কেমন মানুষকে
পশু প্রতিপন্ন করেছে।
লেখকের উদ্দেশ্য ও চরিত্র যেমন হবে তার লেখা তো তেমন হবে,
তাই নয় কী?
৩।রামায়ণে জাতিভেদঃ-
সমস্ত রামায়ন জুড়ে ব্রাহ্মনের
গুন কীর্তন,ব্রাহ্মণের মহিমা প্রচার ও শূদ্রের নীচতা দেখানো হয়েছে।অসংখ্য গল্পের
মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ ও অভিশাপের অব্যর্থ ফলাফল।রামের শম্বুক
হত্যা প্রমান করে রামরাজত্বে শূদ্রদের অবস্থা কেমন ছিলো।শূদ্র হয়ে শম্বুক তপস্যা করেছিলো।এই ছিলো তার অপরাধ।শম্বুকের পাপে শম্বুকের কোন ক্ষতি হয় নি।শম্বুকের
এই পাপে নাকি ব্রাহ্মণের সন্তান মারা যায়।তাই ব্রাহ্মণদের কথায় রামচন্দ্র শম্বুককে
হত্যা করে।যদিও রামায়ন কাল্পনিক মহাকাব্য,বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই তবুও যারা
বিশ্বাস করে রামরাজত্ব ছিলো তাদের জন্য।শাস্ত্রকারের উদ্দেশ্য হল,শম্বুক হত্যার
কাহিনীর মাধ্যমে ধর্ম বিশ্বাসীদের বোঝানো যে বর্ণপ্রথা না মানলে শম্বুকের মত
পরিনতি হবে।
তুলসীদাসের রামচরিতামনসঃ-শূদ্র
ও নারী অবমাননার নিদর্শন দেখুন—
“ঢোল গাওয়ার শূদ্র পশু নারী,
এসব হ্যায় তারণ কী অধিকারী”।এর অর্থ হল ঢোলকে না পেটালে যেমন আওয়াজ হয় না সেরকম
শূদ্র,পশু ও
নারীকে না পেটালে কাজ হয় না।মূল রামায়নে এমন মানবতা বিরোধি শ্লোক প্রচুর আছে।
৪।মহাভারতে
জাতিভেদঃ-
মহাভারতের প্রচুর শ্লোক ব্রাহ্মণ
বন্দনার জন্য ব্যায় হয়েছে।মহাভারতের সর্বত্র ক্ষমতাহীন ব্রাহ্মণের অসীম ক্ষমতার
মিথ্যা প্রচার।অসংখ্য গালগল্পের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ব্রাহ্মণের ক্ষমতার কাছে সব
তুচ্ছ।শূদ্র ও নারীকে হীন প্রতিপন্ন করা হয়েছে।হাজার কল্পকাহিনীর মাধ্যমে দেখানো
হয়েছে ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ ও অভিশাপের অসীম ক্ষমতা।মহাভারত জুড়ে ব্রাহ্মণকে
ভরনপোষন ও দানধ্যান করার নির্দেশ।
মহাভারত(৫/৩০/৯০)ঃ-স্ত্রী
ও শূদ্রকে বিশ্বাস করা উচিত নয়।
মহাভারত(৫/৩৬/৪৪-৪৫)ঃ-শূদ্র
উচ্চ তিন বর্ণের সেবা কর্মের দ্বারা তুষ্ট করতে পারলে তার শূদ্রত্বের অবসান হবে
এবং পরজন্মে উচ্চবর্ণে জন্মাবে ও স্বর্গ প্রাপ্তি হবে।
মহাভারতের সর্বত্র জড়ানো আছে এমন
মানবতাহীন শ্লোক।ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকারের যা উদ্দেশ্য তা যতার্থ ভাবে চরিতার্থ হয়েছে
অসংখ্য শূদ্র ও নারী বিদ্বেষী শ্লোকের মাধ্যমে।
মূলমহাভারত;শান্তিপর্ব-১৮৭অধ্যায়ঃ-ঃ“শূদ্রানামাসিত স্তথা” এখানে বলা হয়েছে
শূদ্রের গায়ের রং কালো,ব্রাহ্মণের-শ্বেতবর্ন,ক্ষত্রিয়ের-রক্তবর্ন ও
বৈশ্যের-পীতবর্ন।
শাস্ত্রকারের মত অনুসারে তাহলে
বলতে হবে পৃথিবীর শীত প্রধান অঞ্চলের সাদা চামড়ার মানুষরা সব ব্রাহ্মণ আর গ্রীষ্ম
প্রধান অঞ্চলের কালো চামড়ার মানুষরা সব শূদ্র?হাস্যকর জ্ঞান ব্রাহ্মণ
শাস্ত্রকারের।
মূলমহভারত;শান্তিপর্বঃভৃগু
ও ভরদ্বাজ সংবাদঃ- “হিংসানৃত প্রিয়া লুব্ধা
সর্ব্বকর্ম্মোপজীবিনঃ
কৃষ্ণাঃশৌচ-পরিভ্রষ্টাতে
দ্বিজাঃ শূদ্রাতাং গতাঃ”।।
যারা তমগুন প্রভাবে
হিংসাপরতন্ত্র,লুব্ধ,সর্ব্ব কর্ম্মোপজীবী,কৃষ্ণবর্ন,মিথ্যাবাদী,শৌচভ্রষ্ট দ্বিজও
শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়।অর্থাৎ এই গুনগুলি যদি ব্রাহ্মণের মধ্যে দেখা যায় সে ব্রাহ্মণ
শূদ্র হয়ে যাবে।তাই যদি হয় তবে সাদা চামড়ার কোন ব্রাহ্মণ যদি এমন বৈশিষ্টের
অধিকারী হয় তবে কী তার চামড়ার রং পাল্টে কালো হয়ে যাবে?শাস্ত্রকারদের মতে সত্ত্বগুনের
প্রভাবে শূদ্রও ব্রাহ্মণ হয়।তাহলে সত্ত্বগুনের প্রভাবে কী কালো চামড়ার শূদ্র
রাতারাতি সাদা চামড়ার ব্রাহ্মণ হয়ে যাবে?ভারতের কোথাও এরকম ঘটেছে কী সত্ত্বগুন
বৃদ্ধি পাওয়ায় কালো শূদ্র হঠাৎ সাদা হয়ে গেল বা তমগুনের প্রভাবে সাদা ব্রাহ্মণ
হঠাৎ কালো শূদ্রে পরিনত হল।মানুষ এমন গিরগিটির মত রং পাল্টাতে পারে কী?
বাংলা মহাভারত বলছে-“চতুষ্পদে গাভী
শ্রেষ্ঠ দ্বিপদে ব্রাহ্মণ”।অর্থাৎ হিন্দুধর্মে গরু আর ব্রাহ্মণ হল সবচেয়ে
উন্নত প্রানী।
৫।পুরাণে জাতিভেদঃ-
১৮ টি
পুরাণের সব গুলিতে জঘন্য জাতপাত,বর্ণপ্রথার মাহাত্ম প্রচার ও ব্রাহ্মণকে ভরন পোষন
করার নির্দেশ।পুরাণ গুলিতে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্রের প্রত্যেকের সীমানা
নির্দেশ করা হয়েছে।হাজার অলৌকিক গালগল্পের মাধ্যমে প্রমান করা হয়েছে বর্ণধর্ম না
মানলে ক্ষতি।অসংখ্য গল্পের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ব্রাহ্মণের অসীম ক্ষমতা।গরীব
মানুষকে নয়,ব্রাহ্মণকে যথাসর্ব্বস্ব দান করার নির্দেশ।
গড়ুর পুরানে
শ্রীকৃষ্ণ বলছে(অধায় ১৩,শ-৫,৬,৭)ঃ “মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ-শূদ্র
ছাড়া অনেক অন্ত্যজ জাতি আছে।এছাড়া ম্লেচ্ছ তুম্ব ভেদে ত্রয়োদশ প্রকার জাতি আছে”।
গড়ুর পুরানে
শ্রীকৃষ্ণ(অধ্যায় ২৪,শ-১৩,১৪,১৫)ঃব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র যদি তাদের
স্বকার্য ছেড়ে অন্য পেশা গ্রহন করে তবে তারা নরকে যাবে।যে শূদ্র ব্রাহ্মণ সেবা করে
না অথচ অন্যান্য কর্ম করে তাকে যম দর্শন করে (অধ্যায় ২৪,শ—১৫)
গড়ুর পুরানে শ্রীকৃষ্ণ বলছে(১৩/৮-৯)-নরগনের
মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ্য।
গড়ুর পুরাণে কৃষ্ণ বলছে-“ব্রাহ্মণ-শ্বেতবর্ন,ক্ষত্রিয়-রক্তবর্ন,বৈশ্য-পীতবর্ন
ও শূদ্র-কৃষ্ণবর্ন”।মূর্খ ব্রাহ্মণ লেখকের এই সূত্র বাস্তবে খাটে কী?কালো রং এর
ব্রাহ্মন ও সাদা রং এর শূদ্রের তো অভাব নেই দেশে।
ব্রহ্মবৈর্বরত পুরাণে
অসংখ্য দেবদেবী সৃষ্টির সাথে সাথে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মানুষের মধ্যে অসংখ্য ভেদাভেদ
সৃষ্টি করেছে।পুরাণের ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকার ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র ছাড়া স্বর্নকার,কুম্ভকার,মালাকা্র,চন্ডা্ল,নাপিত.................অসংখ্য
পেশাজীবী মানুষকে ঈশ্বর সৃষ্ট বলে প্রচার করেছে।
সব ধর্মগ্রন্থে ব্রাহ্মণ
শাস্ত্রকার তাদের জঘন্য উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য ঘৃণ্য জাতপাত,বর্ণপ্রথা সহ সমস্ত
অমানবিক বিধানকে ঈশ্বরের বিধান বলে প্রচার করেছে।
৬।গীতায় বর্ণপ্রথাঃ-
জঘন্য জাতিভেদকে টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে ঘৃণ্য ধর্মগ্রন্থ
হল-গীতা।মানুষকে বোকা বানাতে এখানে জাতিভেদ এর নতূন নাম দেওয়া হয়েছে
বর্ণপ্রথা।গীতাতে জঘন্য বর্ণপ্রথাকে ঈশ্বর সৃষ্ট বলে ঘোষনা করা হয়েছে।বর্ণ অনুযায়ী
সবাইকে কর্ম করতে হবে।বর্ণ অনুযায়ী কর্মই ধর্ম।অন্য বর্ণের কর্ম অধর্ম।শাস্ত্রে
অনভিজ্ঞ অনেক ব্যক্তি বলেন জাত আর বর্ণ এক নয়।হিন্দুরা তার বংশগত জাত অনুযায়ী কর্ম
না করে কী ব্রাহ্মণের কল্পিত শ্রীকৃষ্ণের কাছে চলে যান বর্ণ জানার জন্য?হিন্দু
বাড়ীর কর্মক্ষম যুবকরা কী শ্রীকৃষ্ণকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন তার বর্ণ ও কর্ম কী
হবে?যে বংশে,যে জাতে সে জন্মছে সেই অনুযায়ী তো মানুষ কাজ করে।তাহলে জাত আর বর্ণ
আলাদা কোথায়?
শ্লোক(৪/১৩);- এখানে জঘণ্য চতুর্বর্ণ প্রথাকে ঈশ্বর সৃষ্ট বলে
ষোষনা করা হয়েছে।
শ্লোক(১৮/৪১)ঃ-মানুষের স্বভাব,গুন ও কর্ম অনুযায়ী
ভগবান ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যও শূদ্র বানিয়েছেন।
শ্লোক(১৮/৪৫)ঃ-এখানে বলা হয়েছে বর্ন অনুযায়ী কর্ম
করলে তবে মুক্তি পাওয়া যাবে।
শ্লোক(৯/৩২)ঃ-স্ত্রী,বৈশ্য ও শূদ্রকে পাপযোনী সম্ভূত
বলা হয়েছে।
শ্লোক(৯/৩৩)ঃ-এখানে বলা হয়েছে-ব্রাহ্মণ পূণ্যজন্মা
তারপর ক্ষত্রিয়।তাহলে বৈশ্য ও শূদ্র নিশ্চয় পাপজন্মা।
ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকারেরা সমস্ত ধর্মগ্রন্থে ও ধর্মশাস্ত্রে
তাদের অসৎ উদ্দেশ্য গুলি ঈশ্বরের বানী বলে প্রচার করেছে।যেমন প্রচার করেছে গীতা
ভগবানের মুখঃনিসৃত বানী।এমন ভগবানের মৃত্যূ, মানে মানবতার জয়।এত হুমকী সত্ত্বেও হিন্দুরা
কেন বর্ণ অনুযায়ী কর্ম করছে না?কেন ব্রাহ্মণ মাছ,মাংস বিক্রি করছে?কেন শূদ্র
শিক্ষাদান করছে?ব্রাহ্মণরা আগাম হুমকী দিয়ে রেখেছে যে বর্ণধর্ম না মানলে ভগবান
আসবেন এবং শাস্তি দেবেন।ভগবান তার বর্ণ নির্নয়ের মেসিন নিয়ে কবে আসবেন ?
বেদ থেকে শুরু করে সমস্ত
ধর্মগ্রন্থে জঘণ্য মানবতাহীন জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথাকে টিকিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা
করা হয়েছে কেন ? একটা নয়, অসংখ্য ধর্মশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ বানিয়ে
কেবল মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী ঘৃণ্য জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথাকে ঈশ্বরের বিধান
বলে প্রচার করা হল কেন ? কাদের স্বার্থে ? যখনই সমাজে ঘৃণ্য জাতিভেদে বা বর্ণপ্রথার প্রতি
মানুষের বিতৃষ্ণা জন্মেছে তখনই একটা নতুন ধর্মগ্রন্থ বানিয়ে জঘন্য জাতিভেদকে
ঈশ্বেরের বিধান বলে প্রচার করে ধর্মাব্ধ মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে।ইচ্ছামত
ধর্মগ্রন্থ বানিয়ে মানুষের মধ্যে অসংখ্য জাতপাত সৃষ্টি করে,মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ
তৈরী করে হিন্দুধর্মের ঐক্য বিনষ্ট করার চেষ্টা হল কেন?কারন একটাই ব্রাহ্মণ্য
স্বার্থ রক্ষ্যা।হিন্দুদের কোন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মশাস্ত্রে হিন্দু বা মানুষের কথা নেই,আছে ব্রাহ্মণের কথা্,ব্রাহ্মণের
মঙ্গল ও উন্নতি বিধানের কথা।সমস্ত ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্র ব্রাহ্মণরা
বানিয়েছে নিজেদের মঙ্গলের জন্য।পৃথিবীতে একমাত্র ক্ষয়িষ্ণু ধর্ম হল হিন্দধর্ম।ব্রাহ্মণ্যবাদী
ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্রের সমস্ত বিধিবিধান অন্ধভাবে অনুসরন করে হিন্দুধর্ম আজ
মৃতপ্রায়।হিন্দু কোন জাতি নয়,হিন্দু হাজার হাজার জাতের সমষ্টি মাত্র।আর হিন্দু
জাতিকে হাজার হাজার জাতিতে বিভক্ত করে,খন্ড বিখন্ড করে মৃত্যূমুখে ঠেলে দিয়েছে
ব্রাহ্মণ্যবাদীরা।আর আমরা শিক্ষিত,অশিক্ষিত হিন্দুরাও এই অসার
জঘণ্য জাতপাত,বর্ণপ্রথার নর্দমায় হাবুডুবু খাচ্ছি।তাই ব্রাহ্মণের স্বার্থে বানানো
অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্র,ব্রাহ্মণ
স্বার্থ রক্ষ্যাকারী অসংখ্য কাল্পনিক দেবদেবী এবং ঘৃণ্য জাতপাত,বর্ণপ্রথাকে ত্যাগ
করতেই হবে।এগুলির প্রতি অন্ধভক্তি থাকলে কোন দিন হিন্দুজাতি সংগঠিত হতে পারবে
না।তাই হিন্দুধর্মের জীবন রক্ষ্যার স্বার্থে ব্রাহ্মণ্যবাদের মৃত্যূ প্রয়োজন।
PRASANTA KUMAR
MONDAL
ঃব্যক্তিগত মতামতঃ
|
No comments:
Post a Comment