Friday, 27 January 2017

“আচার্য্য দেব ভব এবং অতিথি দেব ভব”

                

আচার্য্য দেব ভব এবং অতিথি দেব ভব
এসব কেবল বাহ্মণের স্বার্থে বানানো।কারণ শাস্ত্রমতে আচার্য্য এবং অতিথি হতে পারে কেবল ব্রাহ্মণ।ঃ-P.K.Mondal.
-তিথিঅর্থাৎ যা তিথি অনুযায়ী নয়অর্থাৎ যে ব্যাক্তি দিন ক্ষন বিচার না করে আগত হয়তাকেই অতিথি বলেআচার্য্য দেব ভবএবংঅতিথি দেব ভবমন্ত্রগুলি শুনলে মনে হয় যারা এর সৃষ্টিকর্তা এবং যে ধর্মে এসব আছে তারা সব মহান এবং প্রচন্ড মানবিককিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ উল্টোপ্রথমে জানতে হবে যারা এই সুন্দর কথাগুলি বলেছে,তাদের মতেআচার্য্যঅতিথিকারা ? ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকাররা কি তাদের কোন গ্রন্থে নিজ সম্প্রদায় ছাড়া অন্যের কথা ভেবেছে ? ভাবেনিতাই আচার্য্য অতিথি শুধুই ব্রাহ্মণ স্বার্থে তৈরীপূর্ণ মন্ত্রটি হলঃ-মাতৃ দেব ভব, পিতৃ দেব ভব, আচার্য্য দেব ভব, অতিথি দেব ভবএই মন্ত্রগুলি আছে তৈত্তিরীয় উপনিষদেহিন্দধর্মে জঘণ্য চতুর্বর্ণ ব্যবস্হায় সাম্য,স্বাধীনতা ছিল না এবং এখনোও নেইমাতৃ দেব ভব এবং পিতৃ দেব ভবএই দুটি মন্ত্র চারবর্ণের মানুষের সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে বাকী দুটি মন্ত্র একদমই নয়আচার্য্য দেব ভবএবংঅতিথি দেব ভবমন্ত্র দুটি খুব সুন্দর হৃদয়গ্রাহী এবং মানবিক মনে হবে তাদের কাছে,যাদের হিন্দুধর্মের গঠনতন্ত্র সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই
আচার্য্য দেব ভবএবংঅতিথি দেব ভবএই দুটি মন্ত্র সম্পূর্ণ রুপে ব্রাহ্মণের জণ্য লেখা হয়েছেকারণ হিন্দু সমাজের চতুর্বর্ণ ব্যবস্হায় ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ আচার্য্য বা শিক্ষক হতে পারতো না আর একমাত্র ব্রাহ্মণই সবার বাড়ীতে অতিথ হিসাবে গন্য হতো ব্রাহ্মণের বাড়ীতে বৈশ্য শূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ অতিথি হতে পারে না অর্থাৎ অতিথি হওয়ার যোগ্য নয়তখনকার দিনের সমাজ পরিচালনার শক্তিশালী শাস্ত্র মনুসংহিতা(/১১০-১১২)-বলছে যে,ব্রাহ্মণের বাড়ীতে ক্ষত্রিয়,বৈশ্য এবং শূদ্র অতিথি হবে নাতবে ব্রাহ্মণের বাড়ীতে এলে কিছু কাজের বিনিময়ে তারা খেতে পাবে,তবে বাড়ীর চাকরদের সাথে খেতে হবে এবং থাকতে হবে অপস্তম্ভ ধর্মসূত্র(প্রশ্ন-,পটল- খন্ড-,সূত্র-১৯-২০)- বলছে শূদ্র যদি ব্রাহ্মণের বাড়ীতে অতিথি হয় তবে বাড়ীর চাকর তাকে আপায়ন করবে এবং কিছু কাজের বিনিময়ে সেই শূদ্র অতিথিকে খেতে দেবেবিষ্ণুস্মৃতি-(অধ্যয়-,সূত্র-১১৫)-কোন দেবতার অনুষ্ঠানে কোন শূদ্রকে অথবা কোন সন্ন্যাসীকে অতিথি হিসাবে আপ্যায়ন করার জন্য একশতপন দেওয়ার শাস্তি বিধান আছে
অর্থাৎ “অতিথি দেব ভব” তখনই সম্ভব যখন অতিথি জাতিতে ব্রাহ্মণ হবে
ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মের মানুষ,মানুষকে মানুষ হিসাবে দেখে না,দেখে তার জাতজঘণ্য চতুর্বর্ণ ব্যবস্হায় চার বর্ণের মানুষ পরস্পর পরস্পরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে এবং উপরের বর্ণের মানুষ বেশী সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে এটাই নিয়মএই জঘণ্য জাতব্যবস্হায় নিম্নজাতের মানুষ উচ্চ জাতের মানুষের বাড়ীতে ঢুকতে সংকোচ বোধ করে,অতিথি হওয়া দূরে থাকযে ধর্মে মানুষ প্রথমেই জাতের গন্ধ পায়,সেখানে কী কেউ জাত না জেনে কারুর বাড়ীতে ঢোকে ? শাস্ত্র অনুসারে একমাত্র ব্রাহ্মণই যেকোন বর্ণের বাড়ীতে ঢুকতে পারবে এবং অতিথি হতে পারবে
ভারতে ইংরেজ শাসন এবং ডঃ আম্বেদকরের সংবিধানের কল্যানে আচার্য্য দেব ভব কিছুটা সার্বজনীন হয়েছেতবে মাঝে মধ্যে মনুবাদীরা ঠেলে ঠেলে উঠছে এবং স্কুল,কলেজে সব শিক্ষককে তারাআচার্য্য দেব ভববলে মানতে নারাজজাতপাতের নামে তারা আচার্য্যকে অপদস্ত করতেও ছাড়ছে নাতবে বর্তমানেআচার্য্য দেব ভবকিছুটা সার্বজনীন হলেওঅতিথি দেব ভবসার্বজনীন নয়আর চতুর্বর্ণ ব্যবস্হা থাকতে অতিথি দেব ভবকখনো সার্বজনীন হওয়া সম্ভবও নয়কারণ শাস্ত্রে আছে বৈশ্য এবং শূদ্র কখনো ব্রাহ্মণের অতিথি হতে পারে না
অতিথি দেব ভবমন্ত্রটি শুনতে খুব সুন্দুর,শুনলে মনে হয় একবার অতিথি হলে বেশ হয়অতিথি হলেই বোঝা যাবে যে সবাই অতিথি দেব ভবহিসাবে গ্রহন যোগ্য নয়,উচ্চ বর্ণের বাড়ীতে নিম্ন বর্ণের মানুষ অতিথি দেব ভবনয় বরং অতিথি দানব ভববলে বিবেচিত হবেব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুধর্মে চতুর্বর্ণ ব্যবস্হাই হল ধর্মের ভিত্তিঅর্থাৎ হিন্দুধর্মের মূলমন্ত্র হল জাতিভেদ বা চতুর্বর্ণ ব্যবস্হাএই ব্যবস্হায় পিরামিডের মাথায় ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণের নিচে ক্ষত্রিয়,বৈশ্য শূদ্র পর্যায়ক্রমেএই চার বর্ণের মধ্যে শিক্ষক বা আচার্য্য হওয়ার অধিকারী একমাত্র ব্রাহ্মণব্রাহ্মণই যেখানে আচার্য্য পদের যোগ্য, সেখানে আচার্য্য দেব ভবকি কেবল ব্রাহ্মণের লাভের জন্য নয় ? ব্রাহ্মণই ভূ-দেবতা্,আচার্য্য দেবতা অর্থাৎ দেব শব্দটি একান্ত ব্রাহ্মণেরকারণ শাস্ত্রে আছে পৃথিবীতে ব্রাহ্মণই দেবতা স্বরুপ
অর্থাৎ সব বর্ণের মানুষের কাছে অতিথি এবং আচার্য হওয়ার সুবিধা কেবল ব্রাহ্মণ ভোগ করতো।তাই তারা এই“অতিথি দেব ভব” এবং “আচার্য দেব ভব”মন্ত্র দুটি নিজেদের জন্যই বানিয়েছে।যাতে ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র তিন বর্ণের মানুষ তাদেরকে দেবতার মত ভক্তি করে।

আসল কথা হল আচার্য্য দেব ভবএবং অতিথি দেব ভব মন্ত্রগুলিকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে তারা,শাস্ত্রমতে  যারা আচার্য্য বা অতিথি হওয়ার যোগ্য নয়ভারতে হিন্দুধর্মের পাশা পাশি অন্যধর্মের মানুষ যারা বাস করে, তারা জানে হিন্দুধর্মের আচার্য্য দেব ভব অতিথি দেব ভবমন্ত্রগুলি কত হাস্যকরভারতের বাইরে অন্য ধর্মের মানুষ যারা শোনে অতিথি দেব ভব বাGuest is God” তারা ভাবে আহা এমন শ্লোগান যে ধর্মের,সে ধর্ম নিশ্চয় মহান এবং মানবিকআচার্য্য দেব ভবএবং অতিথি দেব ভবমন্ত্র দুটিকে সুন্দর,মহান মানবিক মনে হবে তাদের কাছে যাদের ধারনা নেই যে,শাস্ত্র অনুযায়ী হিন্দুধর্মে ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ আচার্য্য বা অতিথি হতে পারে না
ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকাররা অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ ধর্মশাস্ত্রে শতশত গল্পের মাধ্যমে প্রচার করেছে যে একমাত্র ব্রাহ্মণরাই পৃথিবীতে দেবতাস্বরুপধর্মশাস্ত্রে অসংখ্য গল্পের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ লেখকরা দেখিয়েছে অতিথি ব্রাহ্মণকে অনাদর বা অযত্ন করলে সর্বনাশের শেষ নেইআরো দেখানে হয়েছে অতিথি ব্রাহ্মণকে দেবতা জ্ঞানে সেবা যত্ন করলে গরীব গৃহী অতিথির আশীর্বাদে সব কিছু পেয়ে যায়অর্থাৎ “অতিথি দে ভব” এবং “আচার্য দেব ভব” কেবল ব্রাহ্মণকে পুষ্ট করার জন্য।
                                                                                                         Prasanta kumar Mondal
                                                                                                          মন্তব্যঃব্যক্তিগত  

No comments:

Post a Comment