“হিন্দুধর্মে সাক্ষাৎ
দেবতা হল ব্রাহ্মণ”
“হিন্দুধর্মে সাক্ষাৎ
দেবতা হল ব্রাহ্মণ”
অন্যসব দেবদেবীর জন্মদাতা
হল-“ব্রাহ্মণ”-P.K.Mondal.
ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকারেরা প্রথম
থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদেরকে দেবতা বানানোর জঘন্য পরিকল্পনা করেছে।প্রথম ধর্মগন্থ ঋকবেদ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ পুরাণ পর্যন্ত সর্বত্র
নিজেদেরকে মনুষ্যশ্রেষ্ঠ এবং পৃথিবীর দেবতা অর্থাৎ ভূ-দেবতা
বলে ঘোষনা করেছে।মানুষের ধর্মীয় দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে
তারা অসংখ্য দেবদবী বানিয়েছে এবং মানুষের মনে এই সব কাল্পনিক দেবদেবীর প্রতি
অন্ধবিশ্বাস ও অন্ধভক্তি জাগিয়েছে।দেবদেবীর মুখে কথা বসিয়ে ব্রাহ্মণরা প্রচার
করেছে যে জগতের মঙ্গলের জন্য ঈশ্বর মনুষ্যশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ সৃষ্টি করেছেন এবং
ব্রাহ্মণ দেবতাস্বরুপ।আর এইসব দেবদেবীর মুখে কথা বসিয়ে ঘোষনা করেছে যে ব্রাহ্মণ
দেবতাকে আজীবন সেবা করে যাও মোক্ষলাভ হবে।ভূ-দেবতা সেজে এরা মানুষকে উচ্ছিষ্ট
খাওয়াচ্ছে এবং পাদোদক পান করাচ্ছে।মানুষের হাতে গড়া ধর্ম এবং দেবদেবীর প্রতি
অন্ধমোহ ও ভক্তির জন্য মানুষ এখনো ব্রাহ্মণের দাসত্ব করছে।
ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকার ব্রাহ্মণকে কিভাবে দেবতা বানিয়েছে
দেখুন।
1.বেদঃ-ঋকবেদের ১০ম মণ্ডলে
পরমপুরুষের পবিত্র মুখ থেকে ব্রাহ্মণের উৎপত্তি ঘটানো হয়েছে।অর্থাৎ বেদ বলছে যে ব্রাহ্মণ
পবিত্রতম।বেদ বলছে ব্রাহ্মণ দেবতুল্য।ব্রহ্মবৈর্বত পুরানে শ্রীকৃষ্ণ বলছেনঃ“বিপ্রগন পৃথিবীতে দেবতুল্য বেদে একথা বারবার বলা
হয়েছে”।
2.ব্রাহ্মণ ও সংহিতাঃ-ব্রাহ্মণ ও সংহিতাগুলিতে ব্রাহ্মণকে দেবতুল্য প্রমান করা হয়েছে।
3.উপনিষদঃ-বৃহদারণ্যক উপনিষদ (১/৪/৪৮-১/৪/৫২)
ব্রহ্মা উন্নতর মানুষ হিসাবে ব্রাহ্মণ সৃষ্টি করেছেন।
4.রামায়ণঃ-রামায়ণে ও স্পষ্ট ভাবে ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা হয়েছে।
5.মহাভারতঃ-মহাভারতের পাতায়
পাতায় ব্রাহ্মণের অলীক মাহাত্ম প্রচার করা হয়েছে।ব্রাহ্মণকে দেবত্বে উন্নিত করা হয়েছে।মহাভারত বলছে, “চতুষ্পদে গাভী শ্রেষ্ঠ দ্বিপদে ব্রাহ্মণ”।
রাজধর্ম বর্ণনা করতে গিয়ে
ব্রাহ্মণদের প্রতি রাজার কর্তব্যকে ভীষ্ম এভাবে ব্যাখা করেন-‘ব্রাহ্মণদের কদাচ দন্ড বিধান করিবে না।ব্রাহ্মণ যত অপরাধী হউক শারীরিক
দণ্ডবিধান করা যাবে না।জীবলোকে ব্রাহ্মণ সর্বোৎকৃষ্ট জীব।ব্রাহ্মণের প্রতি
ভক্তি প্রদর্শন মানে রাজার প্রিয়পাত্র হয়ে থাকা”।
6.গীতাঃ- (৯/৩৩) বলছে যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ।ব্রাহ্মণ পূণ্যজন্মা ও পবিত্র।
7.১৮পুরাণঃ-সমস্ত পুরানের সর্বত্র ব্রাহ্মণকে দেবতা বানানো হয়েছে।
গড়ুরপুরাণঃ-বলছে পরম ভক্তিভরে ব্রাহ্মণকে সেবা করো ও পূজা করো।(গঃপুঃঅধ্যায়
৫২,শ-১৮,২১)
ব্রহ্মবৈর্বত পুরাণঃ-(প্রকৃতি খন্ড-শ্রীকৃষ্ণ ও
নন্দরাজ.).......
১/ব্রাহ্মণ সাক্ষাৎ দেবতা স্বরুপ।
২/দেবতারা ব্রাহ্মণের মুখ দিয়ে অন্নজল গ্রহণ করেন।
৩/শ্রীকৃষ্ণ বলছেন অন্নজল দেবতাকে না দিয়ে ব্রাহ্মণকে দিলেও হবে।
৪/ব্রাহ্মণের শরীরে সমস্ত দেবতার বাস।
৫/তীর্থ দর্শণের সমান ফল ব্রাহ্মণ দর্শনে।
৬/ব্রাহ্মণকে পূজা করলে নিষ্ফল হয় না।
৭/ব্রাহ্মণ সর্বদা বিষ্ণুরুপী।
৮/ব্রাহ্মণের চরণে সমস্ত তীর্থ।
৯/ব্রাহ্মণ স্পর্শে সব পাপ নষ্ট হয়।
8.স্মৃতিশাস্ত্র
সমূহঃ-সমস্ত স্মৃতিশাস্ত্র গুলিতে ব্রাহ্মণকে দেবতা বানানোর আপ্রান চেষ্টা করা হয়েছে।
যেমনঃ- a)অপস্তম্ভ ধর্মসূত্রঃ বলছে “ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ”।
b)বশিষ্ট ধর্মসূত্রঃ বলছে চার জাতের মধ্যে “ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ”।
c)বিষ্ণুস্মৃতিঃ বলছে “ব্রাহ্মণ
শ্রেষ্ঠ”।
d)গৌতম ধর্মসূত্রঃ বলছে “ব্রাহ্মণ
শ্রেষ্ঠ”।
e)বৃহস্পতি ধর্মসূত্রঃ বলছে ব্রাহ্মণই
আদর্শ। @prasanta
f)নারদ স্মৃতিঃ বলছে “ব্রাহ্মণই
শ্রেষ্ঠ”।
মনুসংহিতাঃ-১ম,৯৩-“ব্রহ্মার পবিত্রতম মুখ
থেকে ব্রাহ্মণের জন্ম।সকল বর্ণের আগে তার জন্ম,ব্রাহ্মণ এই সৃষ্ট জগতের প্রভু”।১ম,৯৪-“দেব লোকের খাদ্য “হব্য”
এবং পিতৃলোকের খাদ্য “কব্য” বহনের জন্য ও জগৎ সংসার রক্ষ্যার জন্য ব্রহ্মা
নিজের মুখ থেকে ব্রাহ্মণদের সৃষ্টি করেছেন”।
১ম,৯৫-“ব্রাহ্মণের মুখ
দিয়ে সর্বদা স্বর্গবাসী দেবগন হব্য গ্রহন করেন এবং ব্রাহ্মণের মুখ
দিয়ে পিতৃগন শ্রাদ্ধাদিতে প্রদত্ত কব্য গ্রগন করেন”।
১ম,৯৬-“পৃথিবীর পদার্থগুলির
মধ্যে প্রানী শ্রষ্ঠ,প্রানীদের মধ্যে যাদের বুদ্ধি আছে তারা
শ্রেষ্ঠ,বুদ্ধিমান প্রানীদের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ এবং মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ
শ্রেষ্ঠ”।
১ম,৯৮-“উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গেই ব্রাহ্মণ
ধর্মের সাক্ষাৎ মূর্তি এবং ব্রাহ্মণই ব্রহ্মত্ব লাভের উপযুক্ত পাত্র।”। ১ম,১০৯-‘জগতে যা কিছু ধন আছে তা
ব্রাহ্মণের নিজস্ব,সকল বর্নের শ্রেষ্ঠ এবং ব্রহ্মার উত্তম স্হান মুখ থেকে জন্ম বলে
ব্রাহ্মণ সকল সম্পদের অধিকারী’।
৯ম,৩১৩-‘ব্রাহ্মণকে কুপিত করা
রাজার উচিত নয়।কারণ ব্রাহ্মণের অভিশাপে রাজার রাজত্ব চলে যাবে’। ১০ম,১২২-১২৩-‘শূদ্রের
ইহকাল ও পরকালের জন্য ব্রাহ্মণ সেবাই পরমধর্ম।ব্রাহ্মণ সেবা ছাড়া শূদ্রের সব কর্মই
নিষ্ফল’।
১০ম,৩১৭-“বিদ্বান
বা মূর্খ যাই হোক না কেন ব্রাহ্মণ মহৎ দেবতাস্বরুপ”।
৯ম,৩১৯-“ব্রাহ্মণ নীচ কার্যে
যুক্ত থাকলেও সকলের নিকট পূজিত হবে কারণ ব্রাহ্মণ হল পরলোকের দেবতাস্বরুপ”।
ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে প্রথম হল “বেদ”।বেদ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ব্রাহ্মণকে দেবতা বানানোর জন্য
যে জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছে তাতে তারা সফল।কারণ অধিকাংশ হিন্দুারা ব্রাহ্মণকে দেবতা মানে, আর যারা দেবতা হিসাবে মানে না তারা আবার ব্রাহ্মণকে দেবদেবী ও স্বর্গের দালাল হিসাবে মানে।ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ঘৃণ্য জাতিভেদের
দ্বারা হীন,নীচ প্রতিপন্ন করে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং সমাজে
অসাম্য,অবিচার,অত্যাচার,শোষন,বঞ্চনার জন্ম দিয়েছে।জঘণ্য জাতিভেদকে ধর্ম বানিয়ে নিজেরা দেবতা হয়ে বসে বিনা পরিশ্রমে মানুষের পরিশ্রমের ফসল ভোগ করছে।যার ফল স্বরুপ
হিন্দুধর্ম আজ দুর্বলতর ও ক্ষয়িষ্ণু ধর্ম।ব্রাহ্মণ্যবাদীরা জাতিভেদের
দ্বারা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে চরম দূর্দশা ও অশান্তির গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে।ব্রাহ্মণ্যস্বার্থ
রক্ষ্যাকারী গ্রন্থগুলিতে প্রচার করা হয়েছে যে, সব অশান্তি,সব পাপ,সমস্ত সমস্যার
সমাধান হবে এবং সমস্ত আশা-আকাঙ্খা পূরণ ও স্বর্গের টিকিট পাওয়া যাবে ব্রাহ্মণের কাছে।অতএব ব্রাহ্মণ যা চায় দিয়ে দাও এবং যা বলে তাই
কর আর ব্রাহ্মণকে দেবতা জ্ঞানে পূজা কর।তবে মনে রাখবেন ভারতে হিন্দুধর্মকে ক্ষয়িষ্ণু ধর্মে পরিনত
করেছে এবং করছে এই ভূ-দেবতারাই। @Prasanta kumar Mondal
No comments:
Post a Comment