ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবসার উপকরণ বা মূলধনঃPrasanta kumar Mondal.
ইতিহাস সাক্ষী- অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে অস্ত্রের বিকল্প
নেই।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন“শক্তিশেল অপেক্ষা ভক্তিশেল বেশী
কার্যকরী”।তরবারীর জোরে মানুষকে পরাজিত করা
যায় কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে তাদেরকে দাস বানিয়ে রাখা যায় না।ধর্মের প্রতি মানুষের মধ্যে অন্ধভক্তি জাগাতে পারলে সেই ভক্তিতে মানুষ বিনা প্রশ্নে
অবশ হয়ে পড়ে থাকবে।ভক্তি মানুষকে দূঃখ দূর্দশার কারন খুঁজতে দেয় না বরং দুঃখ,কষ্ট
ও দারিদ্রের মধ্যে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।আর সব রকম অপ্রাপ্তির জন্য ভাগ্যকে
দোহাই দিতে শেখায়।তাই আর্য ব্রাহ্মণ্যবাদীরা
ভক্তিশেলের আশ্রয় নেয়।এই ভক্তিশেল হল ব্রাহ্মণ্যবাদীদের স্বার্থে বানানো অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ,যা পাঠ করলে জঘণ্য জাতিভেদ
বা বর্ণব্যবস্হার প্রতি এবং ব্রাহ্মণদের প্রতি প্রেম জাগবে।ব্রাহ্মণই প্রধান দেবতা,ব্রাহ্মণের স্বার্থরক্ষ্যাই
ধর্ম এবং ব্রাহ্মণ বিরোধিতাই অধর্ম।জাতিভেদকে ধর্ম বানিয়ে,মানুষকে জাতিভেদের শৃঙ্খলে
আবদ্ধ করে,পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে,দুর্বল করে আজীবন দাস বানিয়ে রাখতে তারা
বেদ,উপনিষদ,গীতা,রামায়ণ,মহাভারত,পুরাণাদি ও স্মৃতিশাস্ত্র তৈরী করেছে।আর এগুলিই হল হিন্দুদের
ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্র যেখানে হিন্দুর
মঙ্গল দুরে থাক হিন্দু শব্দই নেই।আর ব্রাহ্মণ্যবাদীরা এই গ্রন্থগুলির মধ্যে ঢুকিয়ে
দেওয়া ৯টি অস্ত্রদ্বারা ধর্মভীরু বোকা মানুষকে অবশ করেছে।ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মানুষ
ঠকানো ব্যবসার গুরুত্বপূর্ন অস্ত্রগুলি-বা-মূলধন-হলঃ- পাপ,পূ্ণ্য,আত্মা,প্রেতাত্মা,স্বর্গ,নরক,জন্মান্তরবাদ,আশীর্বাদ
ও অভিশাপঃ-
1.
পাপঃ-ধর্মশাস্ত্র গুলিতে আছে,সমস্ত পাপের উৎস্য ব্রাহ্মণ।কারণ মানুষ নয়,ব্রাহ্মণ অসন্তুষ্ট হলেই তোমার
দেহ পাপে ভরে যাবে।সমস্ত পাপ জন্মায় ব্রাহ্মণকে কেন্দ্র করে,মানুষকে কেন্দ্র করে
নয়।যেমন-ব্রাহ্মণকে ঠকানো পাপ,ব্রাহ্মণকে অপমান করা পাপ,ব্রাহ্মণকে কটূকথা বলা
পাপ,ব্রাহ্মণকে গালি দেওয়া
পাপ,ব্রাহ্মণের জীবিকার ব্যবস্থা না করা পাপ,প্রতিশ্রুতিমত দ্রব্য ব্রাহ্মণকে না
দেওয়া পাপ,আরো অসংখ্য পাপ হয় কেবল ব্রাহ্মণকে কেন্দ্র করে।অতএব ব্রাহ্মণের অবাধ্য?নৈব
নৈব চ।
2.
পূণ্যঃ-হিন্দুধর্মে যত পূণ্য হয় সব ব্রাহ্মণকে কেন্দ্র করে।আর পূণ্য কর্ম মানে
হোম-যাগ-যজ্ঞ-পূজা-পার্বন-প্রায়শ্চত্য-শ্রাদ্ধ প্রভৃতি কর্মের মাধ্যমে-ব্রাহ্মণ
সেবা,ব্রাহ্মন ভোজন,ব্রাহ্মণকে দান-মহাদান ও ব্রাহ্মণের কথা মত চলা।ব্রাহ্মণের চরণ হল সেরা
তীর্থ,পাদোদক হল তীর্থবারি অর্থাৎ ব্রাহ্মণই পূণ্যের ভান্ডার।ব্রাহ্মণের অবাধ্য হলে কোন
পূণ্য হবে না।
3.
আত্মাঃ-ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবসার সবচেয়ে শক্তশালী মূলধন হল
আত্মা।আত্মার নামে মানুষের সর্বস্ব লুঠ করে ব্রাহ্মণ পুরোহিত।৭/আত্মাঃ-আত্মা সম্পর্কে আদিম ধারনা সব ধর্মে থাকলেও
হিন্দুধর্মে ধারনাটি নিয়ে ব্যবসা করছে
ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়।মৃত্যূর পর মানুষের আত্মাকে স্বর্গে পাঠানোর পরিকল্পনা জঘণ্য ও
হাস্যকর।আর এই মিথ্যা স্বর্গের লোভে বোকা মানুষ বাবা/মায়ের মৃত্যূর পর ছুটে যায়
ব্রাহ্মণের কাছে,অলীক স্বর্গের লোভে।জ্যান্ত মানুষকে পাঠাতে পারে না,মানুষ মারা
গেলে তার হাল্কা আত্মাকে কেবল ব্রাহ্মণ দেখতে পায় এবং ফুঁ দিয়ে স্বর্গে পাঠিয়ে
দেয়। বিনিময়ে মৃতের আত্মীয়ের সর্বস্ব লুঠ করে তাকেও আধমরা করে ছাড়ে।অর্থাৎ আত্মা
ব্রাহ্মণের জীবিকা অর্জনের একটি মজবুত অস্ত্র।
4.
প্রেতাত্মাঃ-ব্রাহ্মণ্যবাদী শিক্ষা হল
এই যে, মানুষ মরে ভূত বা প্রেতাত্মা হয়।আর
ব্রাহ্মণকে সর্বস্ব দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারলে তবে প্রতাত্মার মুক্তি হবে।ব্রাহ্মণ
পুরোহিত মৃতব্যক্তির ছেলেমেয়েদেরকে সর্বশ্রান্ত করে তাদের বাবা-মায়ের প্রেতাত্মাকে
স্বর্গে পাঠায়।
5.
স্বর্গঃ--স্বর্গের ঠিকাদার হল
ব্রাহ্মণ পুরোহিত।ধর্মগ্রন্থ
ও শাস্ত্রগুলি দেখিয়েছে ব্রাহ্মণের অবাধ্য হলে স্বর্গ মিলবে না।টাকা পয়সা,ধনদৌলত,সোনাদানা,জমি,,গরু,খাটগদি,জুতো,ছাতা,গাভী..........আরো
হাজার রকম উপকরন যা ব্রাহ্মণ পুরোহিতের প্রয়োজন,সব পেলে মৃত ব্যক্তিকে স্বর্গের
ট্রেনে তুলে দেবে ব্রাহ্মণ।আর স্বর্গ একটা নয়,স্বর্গ অনেক প্রকার।ব্রাহ্মণকে বেশী দিতে
পারলে ভালো স্বর্গ মিলবে। @prasanta
6.
নরকঃ-ব্রাহ্মণের কথার অবাধ্য হলে নরক বাস।হিন্দুধর্মে আবার নরক শতশত প্রকারের।ক্রিমি
কুন্ড,বিষ্ঠা,মূত্রকুন্ড,শ্লেষ্মাকুন্ড,পূঁজকুন্ড,কাককুন্ড,নখকুন্ড....................ইত্যাদি।মানসিক
বিকৃতি কী রকম হলে তবে এমন সব নরক কল্পনা করা যায়।ব্রাহ্মণ বিরোধি হলেই,তোমাকে
এই সব নরকে পচতে হবে।অতএব ব্রাহ্মণ পুরোহিত যা চায়
দিয়ে যাও।
7.আশীর্বাদঃ-ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু
ধর্মশাস্ত্রের প্রচার হল ব্রাহ্মণের আশীর্বাদে সব পাওয়া যায়,সব।সব পাপ নাশ হয় এবং
স্বর্গ প্রাপ্তি হয়।ব্রাহ্মনদের বানানো সমস্ত ধর্মগ্রন্থ
ও শাস্ত্রে অসংখ্য গল্পের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ব্রাহ্মনের আশীর্বাদে সব পাওয়া
যায়।তাই তো ৯০ বছরের বৃদ্ধা ১২ বছরের ব্রাহ্মণ সন্তানের পায়ে পড়ে।
8.অভিশাপঃ-হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের শিক্ষা ও
প্রচার হল ব্রাহ্মণের অভিশাপে পাপ হয়,নরকবাস হয়,রাজত্ব,ধনদৌলত সব চলে যায়।ধর্মগ্রন্থ গুলিতে অসংখ্য
গল্পের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ব্রাহমণের অভিশাপ অবর্থ্য।ব্রাহ্মণের অভিশাপে পতিবিয়োগ,পত্নীবিয়ো্গ,সন্তানবিয়ো্গ,রো্গ,শোক,মহামারী,যুদ্ধেপরাজয়,অভা্ব,দুঃখ, কষ্ট.........বিপদের
শেষ নেই।শাস্ত্রে আছে ব্রাহ্মণের
অভিশাপে দেবতাদের ল্যাজেগোবর অবস্থা।দেবতারা ব্রাহ্মণের অভিশাপের ভয়ে ভীত আর মানুষ
ভয় পাবে না।অতএব কখনো ব্রাহ্মণের অবাধ্য হবে না।
7. জন্মান্তরবাদঃ-মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র
হল জন্মান্তরবাদ।জন্মান্তরবাদ হল এজীবনে তোমার অভাব
অভিযোগ,দুঃখ-কষ্ট,জ্বলা-যন্ত্রনা,ব্যাথা,বেদনা,ক্ষয়-ক্ষতি সব পূর্ব জন্মের পাপের
ফল।এ জীবনে তুমি ব্রাহ্মণের কথা মত সব নির্দেশ পালন কর তাহলে পরের জন্মে সব
পাবে।মানুষকে টুপি পরানোর কি সুন্দর পরিকল্পনা।তাই মানুষ সমস্ত রকম বঞ্চনা,সামাজিক
অসাম্য মুখ বুজে মেনে নেয় অর্থহীন পূর্বজন্মের দোষ দিয়ে।ব্রাহ্মণের কথা মত চললে
তবেই সৎকর্ম হবে,পাপ কাছে ঘেঁসবে না আর কীটপতঙ্গ হয়ে জন্মাতে হবে না।ব্রাহ্মণ বিরোধি হলেই
কীট,পতঙ্গ,কুকু্র,বিড়া্ল,হাতি,ঘোড়া হয়ে জন্মাতে হবে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাই বলেছিলেন—“জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস হল অসভ্য জাতিদিগের বিশ্বাস”।
প্রথমেই মানুষের মন থেকে এই ৯টি অপ্রয়োনীয় শব্দের ভয় মুছে
ফেলতে হবে।কারণ এই ৯টি ব্রাহ্মণ্যবাদী অস্ত্রে বিদ্ধ সমগ্র হিন্দু
সম্প্রদায়।হিন্দুধর্মে জঘণ্য জাতপাত তথা
বর্নপ্রথাকেও শক্তিশালী করা হয়েছে এই ৯টি অস্ত্র দ্বারা।তাই যুক্তিবাদী
মুক্তমনা মানুষ হিসাবে প্রথমেই এই ৯টি ব্রাহ্মণ্য স্বার্থ রক্ষ্যাকারী
অস্ত্র অকেজো করতেই হবে।এমন একটিও ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মশাস্ত্র
কেউ দেখাতে পারবে না যেটি মানুষের কথা বলেছে বা মানুষ তথা হিন্দুর মঙ্গল বা উন্নতি
চেয়েছে।সমস্ত ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মশাস্ত্র জুড়ে ব্রাহ্মণের অবাস্তব অলৌকিক
কল্পকাহিনীর দ্বারা ব্রাহ্মণের মহিমা প্রচার ও ব্রাহ্মণের উন্নতির বিধান।আর বাকী মানুষদেরকে
জাতিভেদের বিষে ডুবিয়ে রাখার পরিকল্পনা। কেন
?
আমি মনেকরি প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ যদি ভন্ডামি ছেড়ে,তাদের
শিক্ষাকে সম্মান জানিয়ে মানবতার খাতিরে জঘণ্য জাতিভেদ ও সমস্ত কুসংস্কারের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে বেশী সময় লাগবে না।
@prasanta kumar Mondal.
No comments:
Post a Comment