মনুসংহিতা
ও ভগব্দগীতার চরিত্র একইঃP.K.Mondal.
“মনুসংহিতা” যেমন
চতুর্বর্ণ বা জাতব্যবস্থা বলবৎ রাখতে কঠোর অমানবিক শাস্তির বিধান দিয়েছে,ভগবদ্গীতা
ও চরম খুনের হুমকি দিয়েছে।গীতাও চতুর্বর্ণ বা জাতব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার মরিয়া
চেষ্টা করেছে।তবে গীতার সময় মনুবাদী সমাজব্যবস্থা না থাকায় শাস্তির বিধান কার্যকর
করা যায় নি।তবে কৃষ্ণের মুখ দিয়ে চতুর্বর্ণ বিদ্বেষীদের খুনের হুমকী দেওয়া
হয়েছে।যারা মনুস্মৃতি থেকে সরে এসে ভগবদ্গীতায় আশ্রয় নিতে চান তারা হয় গীতা জানেন
না অথবা তারা বিবেচনা করতে সক্ষম নয় যে গীতা ও মনুসংহিতা একই চরিত্রের।স্পষ্ট কথা
হল মনু এবং গীতার ব্রাহ্মণ লেখকের উদ্দেশ্য একই,জঘণ্য জাতব্যবস্হা বা
বর্ণপ্রথাকে বাঁচিয়ে রাখা।
ভগবদ্গীতায় জনপ্রিয় চরিত্র “কৃষ্ণের” সাহায্যে কেমন করে মনুসংহিতার উদ্দেশ্য স্বার্থক
করার চেষ্টা হয়েছে দেখুনঃ-
১।গীতা(৪/১৩)ঃ-“আমি নিজে মানুষের গুন ও কর্ম অনুযায়ী (ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র)এই চার
বর্নের সৃষ্টি করেছি এবং প্রত্যেকের পেশা ঠিক কে দিয়েছি”।
২।গীতা(৩/৩৫)ঃ-“অন্য বর্নের পেশা সহজতর মনে হলেও করা যাবে না্,নিজের বর্নের পেশা সম্পূর্ন
দক্ষভাবে করতে না পারলেও তা অধিক সম্মানের।নিজের পেশা অনুসরণ করে মৃত্যূ হলেও
কল্যানকর কিন্তু অন্যের পেশা অনুসরণ বিপদজনক”।
৩।গীতা(৩/২৬,২৯)ঃ-“শিক্ষিতজনের উচিত নয় অশিক্ষিতজন যারা তাদের পেশার সাথে
যুক্ত তাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করা।শিক্ষিত মানুষ তার নিজের পেশায় যুক্ত হতে না
পারে;কিন্তু অশিক্ষিত বা স্থূলবুদ্ধির মানুষ যারা তাদের পেশায় যুক্ত আছে তাদের
বিভ্রান্ত করবে না”।
৪।গীতা(৪/৭,৮)ঃ-“হে অর্জুন,যখনই কর্তব্য ও পেশার এই ধর্ম অর্থাৎ চতুর্বর্নের
এই ধর্ম অধঃপতিত হবে,তখন যারা এই অধঃপতনের জন্য দায়ী তাদের শাস্তি দিতে এবং এর
পুনঃপ্রচলন করতে আমি জন্ম নেব”।
কৃষ্ণকে না মানার অর্থ হল জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথাকে অস্বীকার
করা।তাই ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখক গীতার কৃষ্ণের মুখ দিয়ে গীতা বিরোধিদের হুমকী ও
গালাগালি দিয়েছে।নিম্নে দেখুন গীতার মনুবাদী ব্রাহ্মণ লেখক ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধি মানুষকে
কেমন গালাগালি ও হুমকী দিয়েছেঃ-
১।শ্লোক-(৭/১৫)তে কৃষ্ণ বলছেন আমাকে যারা মানে না ভজনা করে না তারা
অজ্ঞানী,অসু্র,নরাধম ও নীচ।
২।শ্লোক-(৯/১১)তে কৃষ্ণ বলছেন যারা আমাকে না চিনে মানুষ
ভেবে অবজ্ঞা করে তারা মূঢ় বা মূর্খ। ৩।শ্লোক-(১৬/৮)তে কৃষ্ণ বলছেন
যারা বলে এ জগৎ ধর্মাধর্মের ব্যবস্হাহীন,কর্মফলদাতা ঈশ্বর নেই এবং যারা বলে নারী
পুরুষের মিলনে জগৎ বা জীব সৃষ্ট তারা অসুর প্রকৃতির মানুষ।
৪।শ্লোক-(১৬/৯)তে কৃষ্ণ বলছেন ঐ ব্যক্তিরা
মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন,বিকৃত স্বভাবের এবং ক্রুরমনা।
৫।শ্লোক-(১৬।১০)তে কৃষ্ণ বলছেন এরা অশুভব্রত কর্মে প্রবৃত্ত হয়।
৬।শ্লোক-(১৬।১২)তে কৃষ্ণ বলছেন এরা কাম ও
ক্রোধের অধিন।
৭।শ্লোক-(১৬।১৪)তে কৃষ্ণ বলছেন দুর্জয় শত্রুকে আমি নাশ করেছি এবার অন্যান্যদের
নাশ করিব।
৮।শ্লোক-(১৬।১৯)তে কৃষ্ণ বলছেন উক্ত পাপাচারী ক্রুর নরাধমদের আমি বারবার আসুরী যোনীতে
ঢুকিয়ে দেব। একী ভগবান ? না
ক্রিমিনাল ?
৯।শ্লোক-(১৬।২০)তে কৃষ্ণ বলছেন এরুপ মূঢ় ব্যক্তিরা জন্মে জন্মে আসুরী যোনী প্রাপ্ত হবে এবং ক্রমে নিম্মগতি প্রাপ্ত হয়ে
ঘোর নরকে যাবে।
১০।শ্লোক-(১৬।২৪)তে কৃষ্ণ বলছেন কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারনে শাস্ত্রই তোমার
প্রমান।
১১।শ্লোক-(১৮।৭১)তে কৃষ্ণ বলছেন শ্রদ্ধাসহকারে কোন দোষ না ধরে গীতা শ্রবন করো
তাহলে স্বর্গে যাবে।
জঘণ্য
জাতব্যবস্থা বা চতুর্বর্ণে বিঘ্নসৃষ্টিকারী মানুষদের অমানবিক শাস্তির বিধান দিয়েছে মনুসংহিতা।যেমন শূলে চড়ানো,জিহ্বা,হাত,পা
কেটে ফেলা,পাছা পোড়ানো,কানে তরল সিসা বা মোম ঢালা,মৃত্যূদন্ড.........প্রভৃতি।আর
গীতার ব্রাহ্মণ্যবাদী লেখক(শ্রীকৃষ্ণ)সেই মনুর মতোই চতুর্বর্ণ বিদ্বেষীদের
চরম হুমকি দিয়েছে।গীতার কৃষ্ণের শাস্তিবিধান
নিশ্চয় আধুনিক এবং মারাত্মক হবে কারন এখন তো পিস্তল,বোমা,বন্দু্ক,অ্যাসিড,গ্যাস,জীবাণু
অস্ত্রের রমরমা।অর্থাৎ প্রমান হল মনুসংহিতা ও গীতার উদ্দেশ্য একই।জঘন্য
জাতব্যবস্থাকে জীবিত রাখা। @Prasanta
No comments:
Post a Comment